শুভ্র মজুমদার, কালিহাতী (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি:
টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে অভিনব কৌশলে অপহরণের পর মুক্তিপণ আদায়ের চেষ্টাকালে পুলিশের জালে ধরা পড়েছে অপহরণ চক্রের এক সদস্য। যাত্রীবেশে প্রাইভেটকারে তুলে অপহরণের পর বিকাশের মাধ্যমে টাকা আদায়ের চেষ্টার সময় প্রযুক্তির সহায়তায় টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের পাকুল্যা বাসস্ট্যান্ড থেকে ইউনুস আলী (৩২) নামে এক অপহরণকারীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তবে তার দুই সহযোগী এখনো পলাতক। তদন্তের স্বার্থে তাদের পরিচয় আপাতত প্রকাশ করা হয়নি।
কালিহাতী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবুল কালাম ভূঁইয়া জানান, ২৫ জানুয়ারি বিকেলে ঘাটাইল উপজেলার হাটকয়রা গ্রামের মো. হাসান (৩০) এলেঙ্গা বাসস্ট্যান্ড থেকে একটি প্রাইভেটকারে ওঠেন। প্রথমে করটিয়া পর্যন্ত গাড়িটি স্বাভাবিকভাবে চললেও পরে চালক ও দুই অপহরণকারী কৌশলে গাড়ির গতিপথ পরিবর্তন করে। একপর্যায়ে তারা হাসানকে মারধর করে এবং তার পরিবারের কাছে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। এর মধ্যে বিকাশের মাধ্যমে ২৫ হাজার টাকা আদায় করা হয়।
পরিবার দ্রুত বিষয়টি পুলিশকে জানালে প্রযুক্তির সহায়তায় অপরাধীদের অবস্থান শনাক্ত করা হয়। পুলিশ তাৎক্ষণিক অভিযান চালিয়ে ২৫ জানুয়ারির রাতে মির্জাপুরের পাকুল্যা বাসস্ট্যান্ড থেকে অপহরণকারী ইউনুস আলীকে গ্রেফতার করে। সে লালমনিরহাটের আদিতমারী থানার সারপুকুর সর্দারটারী গ্রামের মৃত আহাদ আলীর ছেলে। অভিযানে অপহৃত হাসানকে উদ্ধার করা হয় এবং বিকাশের মাধ্যমে পাঠানো ২৫ হাজার টাকা ও একটি এটিএম কার্ড উদ্ধার করা হয়।
ভিকটিমের খালাতো ভাই মো. সাকিব আল হাসান বাদী হয়ে কালিহাতী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন (মামলা নং-১৫, তারিখ: ২৬/০১/২৫)। মামলার ভিত্তিতে ওসি আবুল কালাম ভূঁইয়ার নেতৃত্বে পুলিশ অভিযানে নামে, যেখানে এসআই ইমাম হোসেন, এএসআই রেজাউল, হারুন অর রশিদ ও শহিদুল ইসলামসহ একদল পুলিশ সদস্য অংশ নেন।
পুলিশ জানিয়েছে, চক্রের অন্যান্য সদস্যদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে এবং গ্রেফতারকৃত আসামির বিরুদ্ধে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে।
অপহরণের মতো ভয়াবহ ঘটনার পর পুলিশের তাৎক্ষণিক তৎপরতায় ভিকটিমের দ্রুত উদ্ধার স্থানীয়দের মধ্যে স্বস্তি এনে দিয়েছে। অনেকেই বলছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দ্রুত পদক্ষেপ এবং প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারের কারণে হাসানকে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। তারা অপরাধীদের কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছেন, যাতে ভবিষ্যতে কেউ এ ধরনের অপরাধ করার সাহস না পায়।
এই সফল অভিযানের মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আবারও প্রমাণ করল, অপরাধীরা যতই চতুর হোক না কেন, পুলিশের দক্ষতা ও আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে তাদের ধরা সম্ভব। টাঙ্গাইল জেলা পুলিশের এই উদ্যোগ অপরাধ দমনে একটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।