মোঃ সাইফুল্লাহ:
মাগুরার কৃষকেরা বিভিন্ন জাতের ধান চাষ করে ফলন কম পাওয়ায় বিনা উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল ধান চাষে আগ্রহী হচ্ছে!
মাগুরা সদর উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়ন এর দারিয়াপুর গ্রামের কৃষক ভক্ত বিশ্বাস। ইতিপূর্বে বাজার থেকে কেনা বিভিন্ন জাতের ধানের বীজ রোপন করে বিঘা প্রতি ফলন পেতেন খুবই কম। অনেক সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা সামান্য কারণে ধানের ফলন এতই কম হতো যে উৎপাদন খরচও উঠত না। ফলে ধান চাষের প্রতি অনেকটাই আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছিলেন তিনি সহ ঐ এলাকার অধিকাংশ কৃষক। অন্যদিকে সাধারণ জাতের ধান চাষ করতে সময় বেশি লাগায় রবি মৌসুমে ফসল ফলানো কঠিন হয়ে পড়তো। এমতবস্থায় প্রচলিত আমন ধানের বিভিন্ন জাতের বিপরীতে পরমাণুর শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা) উদ্ভাবিত বিভিন্ন জাতের ধান রোপন করে প্রায় দ্বিগুণ উৎপাদন করতে পারছেন ভক্ত বিশ্বাস সহ ওই গ্রামের অনেক কৃষক। সেইসঙ্গে স্বল্প জীবনকাল হওয়ায় জমিতে সরিষা, মসুর তিলসহ নানা ধরনের রবি শস্য উৎপাদন করে বাড়তি আয়ের স্বপ্ন দেখছে কৃষকরা। ভক্তর দেখাদেখি অনেকেই এখন বিনা উদ্ভাবিত বিনাধান -১৭, বিনাধান -২২, বিনাধান- ২৬, এবং ব্রিধান -৭৫ ও ব্রি ধান ১০৩ চাষ করছেন। সরেজমিনে দ্বারিয়াপুর গ্রামের মাঠে গিয়ে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে প্রচলিত ধান চাষ করে তারা যেখানে বিঘাপ্রতি (৩৩ শতাংশ) ১২ থেকে ১৫ মন ধান পেতেন সেখানে বিনা ও বাংলাদেশ রাইস রিসার্চ ইনস্টিটিউট ব্রি উদ্ভাবিত উন্নত জাতের ধান লাগিয়ে ২৫ থেকে ২৭ মন পর্যন্ত উৎপাদন করতে পারছেন। এছাড়া উচ্চ ফলনশীল এ ধানের জাতগুলি সরু ও সুগন্ধি সম্পন্ন হওয়ায় বাজারে ভালো দাম পাওয়া যায়। সেই সঙ্গে বিনা ও ব্রি উদ্ভাবিত ধানের জীবন কালও কম হওয়ায় এ ধান কেটেই তারা সরিষা, তিল, মসুর ডাল, খেসারীর ডাল বা ক্ষেত্র বিশেষে চিয়া সিড চাষ করে বাড়তি একটি ফসল ঘরে তুলে লাভবান হতে পারবেন। ফলে ভক্ত বিশ্বাসের মতোই ওই গ্রামের আক্কাস মন্ডল, মেহের মুন্সি, জুয়েল রানা, মাসুম মিয়া সহ একাধিক কৃষক এখন বিনা ও ব্রি উৎপাদিত বিভিন্ন ধরনের ধানের জাত চাষ করতে আগ্রহী হয়েছেন। মঙ্গলবার বিকেলে মাগুরা সদর উপজেলার দারিয়াপুর মাঠের পাশে প্রায়োগিক পরীক্ষণ মাঠে বিনা উদ্ভাবিত আমন ধানের মূল্যায়ন শীর্ষক মাঠ দিবস শেষে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
মাঠ দিবস অনুষ্ঠানে মাগুরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মোঃ ইয়াসিন আলীর সভাপতিত্বে অনলাইনে সংযুক্ত থেকে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন বিনা ময়মনসিংহের মহাপরিচালক ড. মোঃ আবুল কালাম আজাদ। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিনা ময়মনসিংহের পরিচালক গবেষণা ডঃ মোঃ ইকরামুল হক, বিনা গবেষণা কার্যক্রম শক্তিশালী করন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ড. মোঃ মাহবুব আলম তরফদার, বিনা ময়মনসিংহের পিএসও ড. মোঃ আশিকুর রহমান, বিনা মাগুরা উপকেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ আসাদ উল্লাহ, মাগুরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক কৃষিবিদ বিষ্ণুপদ সাহা, এসও শুভা আঞ্জুমান শাম্মী, প্রগতিশীল কৃষক ভক্ত বিশ্বাসসহ আরো অনেকে। এ সময় ওই গ্রামের শতাধিক কৃষাণ কৃষাণী উপস্থিত ছিলেন। সভা থেকে আসন্ন মৌসুমে উন্নত জাতের বিনা উদ্ভাবিত ধান রোপণের মাধ্যমে কৃষকদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য সকলের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা গ্রহণের উদাত্ত্ব আহ্বান জানানো হয়।