নওগাঁ প্রতিনিধি:
নওগাঁর মহাদেবপুরে পাওনা টাকা দেওয়ার নামে ডেকে নিয়ে ধান ব্যবসায়ীকে মারধরের পর এবার পাওনাদারদের বিরুদ্ধে মিথ্যা কাউন্টার মামলা করার অভিযোগ উঠেছে সেই আলোচিত ওসমান এগ্রো (প্রা.) লিমিটেড কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে । মহাদেবপুর থানায় মামলাটি করেছেন হাজার কোটি টাকা সম্পদ থাকার পরও নিজেকে দেওলিয়া দাবী করা সেই আলোচিত ওসমান গণির জামাতা শওকত আল ওসমান।
ভুক্তভোগী পাওনাদার ব্যবসায়ীদের দাবী পূর্বের ওসি সত্য জেনেও বদলী হওয়ার শেষ মূহুর্তে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে মামলাটি গ্রহন করেছে। অবিলম্বে মিথ্যা কাউন্টার মামলাটি প্রত্যাহার ও পাওনা টাকা ফেরতসহ ওসমান গণির বিচারের দাবী জানান ব্যবসায়ীরা।
জানা যায়, ধান বিক্রয়ের পাওনা টাকা দেওয়ার নামে গত ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ খ্রি. ডেকে নিয়ে ব্যবসায়ীদেরকে মারধর করা হয়। এই ঘটনায় ১০ ব্যবসায়ী আহত এবং ১১টি মোটরসাইকেল ভেঙ্গে ফেলা হয়।
ঘটনার দিন ব্যবসায়ীদের পক্ষে পাওনাদার ছামিউল আলম ওসমান এগ্রোর মালিক ওসমান গণি বিরুদ্ধে মহাদেরপুর থানায় মামলা করেন । ওই মামলার তিনদিন পর ওসমান গনির জামাতা শওকত আল ওসমান ওই থানাতে একটি কাউন্টার মামলা দায়ের করেন। কাউন্টার মামলায় পত্নীতলা থানার মল্লিকপুর গ্রামের আলহাজ্ব জাকের আলীর ছেলে আহসান হাবিবকে (৫২) ১ নং ও বদলগাছী থানার পূর্বখাঁপুর গ্রামের মৃত কালামের ছেলে ছামিউল আলমকে ২ নং আসামী করে ২১ জনের নাম উল্লেখ করা হয়।
মামলার আরজিতে উল্লেখ আছে, আসামীগণ ধান ব্যবসায়ী। আসামীগণের সহিত বাদীর শশুরের মিলের ধান ক্রয়-বিক্রয়ের টাকা পাওনা আছে। এ নিয়ে উভয়ের মধ্যে আপোষ মিমাংসা হয়েছে। তা স্বত্বেও আসামীগণ(পাওনাদার ব্যবসায়ীরা) অজ্ঞাতনামা ৫০/৬০ জনকে নিয়ে মটরসাইকেলের ও ভুটভুটি যোগে হাতে ধারালো হাসুয়া, লোহার রড, বাঁশের লাঠি নিয়ে মিলে মেইন গেট ভাংচুর করে এবং ভিতরে ঢুকে মিলে আগুন জ্বালাইয়া দেওয়ার চেষ্টা করে। সকলকে এলোপাথাড়ী ভাবে মারপিট করতে থাকে।
এসময়, ১ নং আসামী আহসান হাবিব এর হাতে থাকা ধারালো হাসুয়া দিয়ে মিলের শ্রমীক মহাসীনকে হত্যার উদ্দেশ্যে মাথায় কোপ মারে। মহাসীন উক্ত কোপাটি বাম হাতে প্রতিহত করলে বাম হাতের বৃদ্ধা আঙ্গুলে লেগে গুরুতর জখম হয়।
প্রকৃতপক্ষে আহসান হাবিব একজন সরকারি কলেজের প্রভাষক বেলাল টের্ডাসের স্বত্বাধিকারীর ভাই। যারা প্রায় তিন কোটির মত টাকা পাওনা আছে। এত টাকার পাওনাদার ও একজন সরকারি কলেজের প্রভাষক হয়ে হাসুয়া নিয়ে টাকা আদায় করতে আসাকে হাস্যকর বলে মনে করেন স্থানীয়রা।
২ নং আসমী ছামিউল আলমের হাতে থাকা লোহার রড দিয়ে আনোয়ার হোসেনকে হত্যার উদ্দেশ্যে মাথায় আঘাত করলে মাথার মাঝখানে লেগে জখম হয়।
এই ঘটনার ভিকটিম আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে ওসমান এগ্রোর কোন সম্পর্ক নেই। তিনি একটি মার্কেটে নাইট গার্ডের চাকরি করেন। ঘটনার সময় ব্যক্তিগত কাজ সেরে রাস্তা দিয়ে আসার পথে উভয়পক্ষের হট্টগলে তার মাথায় এসে একটি ইটের টুকরো লাগে। তবে কে বা কাহারা ইটটি ছুড়েছে সেটি তার জানা নেই। এতে চোখের উপরে সামান্য চামড়া ছিড়ে যায়। কিন্তু মামমাল ২ নং আসামী ছামিউল আলমের লোহার রড়ের আঘাতে মাথা ফেঁটে যাবার অভিযোগ করা হয়েছে।
এছাড়া অন্যান্য আসমীরা মিলের বিভিন্ন জিনিসপত্র ভাংচুর করে ১০ লক্ষ টাকার ক্ষতি এবং ক্যাশ ড্রয়ারে ভেঙ্গে ৫ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা চুরি করার অভিযোগ করা হয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, এই মামলায় আনিত সকল ঘটনায় অভিযুক্ত ব্যবসায়ীরা ওসমান গনির নিকট ৩৫ কোটি টাকা পাওনা আছে। কোটি টাকা পাওনাদার সাড়ে ৫ লাখ টাকা চুরি করা, সেই মিল জ্বালিয়ে দেওয়া, পাওনা আদায়ে হাসুয়া ও রড নিয়ে আসাকে অযৌতিক বলে জানান স্থানীয়রা। সচেতন মহল মনে করছেন পাওনাদারদের আতংকিত ও ভয়ভীতি দেখাতেই এই পথ বেছে নিয়েছেন ওসমান গণি। সেকারনে অবিলম্বে মামলাটি প্রত্যাহার সহ পাওনাদারদের টাকা ফেরত দেবার দাবী দাবী জানান তারা।
ভিকটিম আনোয়ার হোসেন বলেন, আমি বাজারে নাইটগার্ডের চাকরি করি। অন্য একজনকে চাকরি পাইয়ে দিতে ঘটনার দিন একটি মার্কেট মালিকের সঙ্গে দেখা করতে ওদিকে গিয়েছিলাম। দেখা করে ফেরার সময় দেখি মিলের সামনে হট্রগল চলছে। তখন হঠাৎ করে একটি ইটের টুকরা এসে আমার মাথায় লাগে। এতে কিছুটা অংশ কেটে যায়। আমি হাসপাতালে ভর্তি হয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছি। তবে এ কার ছোড়া ইট আমার মাথায় লেগেছে জানিনা। ছামিউল আলমকেও আমি চিনিনা। তিনি আমার মাথায় কোন আঘাত করেনি।
পাওনাদার আবু তালেব বলেন, মহসিন নামে ওসমান এগ্রোর যে শ্রমীক আহত হয়েছে তিনি মেশেনারিজ ফোরম্যান। ঘটনার দুই দিন আগে মেশিনারীদের কাজ করতে গিয়ে চাপা লেগে তার আঙ্গুল জখম হয়েছে অথচ এই কাউন্টার মামলায় হাসুয়া দিয়ে কোপ মেরে জখম করা হয়েছে মিথ্যা তথ্য দেওয়া হয়েছে। একটি সম্পন্ন মিথ্যাও ভিত্তিহীন।
আহসান হাবিব বলেন, রাইস মিলা ওসমান পাওনা টাকা দেওয়ার নামে ডেকে নিয়ে আমাদের উপর হামলা করে তার প্রেক্ষিতে আমরা থানায় একটি মামলা করি। কিন্তু ঘটনার তিনদিন পর কাউন্টার মামলা করা হয় যা সম্পূর্ণ ভিত্তা ও ভিত্তিহীন। ওসি রুহুল আমিন বদলির শেষ সময়ে মোটা অংকের টাকার বিনিময় এ মিথ্যা মামলা গ্রহন করে চলে গেছেন। আমরা অবিলম্বে মামলা প্রত্যাহার দাবি করছি।
মহাদেবপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. হাশমত আলী জানান, আমি আসার পূর্বে কি হয়েছে সে বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে পক্ষে -বিপক্ষে মন্তব্য থাকবেই, আমরা তদন্ত করে প্রকৃত যে ঘটনা পাব সেই মোতাবেক প্রতিবেদন প্রদান করব।