বিশেষ প্রতিনিধি:
মাগুরায় আলোচিত ৮ বছরের শিশু আছিয়া ধর্ষণ ও হত্যা মামলার যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে আগামী ১৭ মে রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেছেন আদালত।
রাষ্ট্র পক্ষে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিয়োগকৃত এ্যাটর্নী জেনারেল পদ মর্যদার আইনজীবি এহসানুল হক সমাজী উপস্থিত থেকে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালের বিজ্ঞ বিচারক এম জাহিদ হাসানের আদালতে মঙ্গলবার বেলা ১১ টায় যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে আগামী ১৭ মে রায় ঘোষনার দিন ধার্য করেন।
এহসানুল হক সমাজী যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে সাংবাদিকদের জানান, আলোচিত শিশু আছিয়া হত্যা মামলায়, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা অনুসন্ধান শেষে বিজ্ঞ আদালতে যে সকল মৌখিক ও দালিলিক সাক্ষ্য উপস্থাপন করেছেন তা সাক্ষ্য আইনের ৩ ধারায় প্রসিকিউশনের আনিত অভিযোগ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে। আমরা এই মামলায় আসামী হিটু শেখের দোষ স্বিকারউক্তিমুলক জবানবন্দী, মেডিকেল এভিডেন্স ও পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্য যদি আমরা কমপেয়ার করি তাহলে দেখা যায় আসামীদের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ পুক্ষানুপক্ষুরুপে প্রমান করতে সক্ষম হয়েছি। আমরা বিজ্ঞ আদালতকে বলেছি, একজন শিশুর প্রতি যে নিষ্ঠুর, অমানবিক ও পৈশ্বাচিক যে ধরণের বিকৃত রুচির সম্পন্ন যে আচরণ করা হয়েছে, যা কিনা আমরা সাক্ষ্যতে ও মেডিকেল এভিডেন্স এ পেয়েছি। বাংলাদেশের বুকে এ ধরনের কোন ভুল দ্বিতীয় বারের মত কোন নারীর ও শিশুর সাথে এ ধরণের পৈশাচিক বর্বর শুলভ আচরণ করতে না পারে, সে জন্য দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। এ মামলার যে প্রধান আসামী সে আদালতে স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দীতে পুক্ষানুপুঙ্খ রুপে স্পষ্ট করে বলেছেন, তিনি কিভাবে এ ঘটনাটি ঘটিয়েছেন ও হত্যা করেছেন। তাই এ মামলার আসামীর অনুকম্পা পাওয়ার কোন সুযোগ নেই। দেশের মানুষ সারা বিশ্বের মানুষ এই ঘটনার প্রতিবাদ করেছে, প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। আশা করি প্রসিকিউশন ন্যায় বিচার পাবে এবং ন্যায় বিচারের মাধ্যমে আগামী দিনে উদাহরন সৃষ্টি হবে। কোন শিশুর সাথে এই ধরণের ধর্ষণ বা হত্যা বা অপরাধ না হয়। ভবিষৎতে এটি একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। তাই আমরা সকল আসামীর বিরুদ্ধে আইনের সবোর্চ্চ শাস্তি আশা করছি।
আলোচিত এই মামলায় বাদি, সাক্ষী, চিকিৎসক সুরতহাল ও পোষ্টমার্টাম রিপোর্ট প্রস্তুুতকারী কর্মকর্তা এবং মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাসহ মোট ২৯ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহন করেছেন আদালত। আগামী ১৭ মে এই মামলার রায় ঘোষনার জন্য বিজ্ঞ আদালত দিন ধার্য করেছেন। এ সময় আসামীরা আদালতে উপস্থিত ছিল।
উল্লেখ্য, মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার জারিয়া গ্রামের ৮ বছরের শিশুটি গত ১ মার্চ সদর উপজেলার শহরতলীর নিজনান্দুয়ালী গ্রামে বড় বোনের বাড়িতে বেড়াতে আসে। সেখানে সে ৬ মার্চ ধর্ষণের শিকার হয়।
প্রথমে তাকে মাগুরা ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করা হলে অবস্থার অবনতি হলে প্রথমে ফরিদপুর ও পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়। সর্বশেষ চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৩ মার্চ ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে তার মৃত্যু বরণ করে। এ ঘটনায় শিশুটির মা আয়েশা খাতুন বাদি হয়ে মাগুরা সদর থানায় মেয়ের শ্বশুর হিটু শেখ, জামাই সজিব শেখ, তার ভাই রাতুল শেখ ও তাদের মা জাহেদা খাতুনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেন। পুলিশ ঘটনার পর ৪ আসামীকেই গ্রেফতার করে। এ মামলায় ১৩ এপ্রিল মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আলাউদ্দিন আসামীদের বিরুদ্ধে আলোচিত এ মামলার অভিযোগ পত্র আদালতে দাখিল করেন।